-
শিক্ষারে জন্য এসো সেবার জন্য বেড়িয়ে যাও।
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয়
Sed ut perspiciatis unde omnis iste natus error sit voluptatem, totam rem aperiam, eaque ipsa quae ab illo inventore et quasi architecto beatae vitae dicta sunt explicabo.
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয়: অন্ধকারে আলোর প্রদীপ
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো শুধু শিক্ষাদান নয়, বরং একটি সমাজের পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবেও পরিচিত। তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয়। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার নরোত্তমপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠার পটভূমি
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অব্যবহিত পর। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে তখন শিক্ষা ছিল অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। এমন সময় কিছু প্রজ্ঞাবান ও সমাজসেবী ব্যক্তি নরোত্তমপুর গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসেন। তাদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি এলাকায় শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।

পরিচিতি ও প্রশাসনিক তথ্য
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭২ ইং
EIIN নম্বর: 109244
অবস্থান: গ্রাম ও পোস্টঃ নরোত্তমপুর
উপজেলা: কাপাসিয়া
জেলা: গাজীপুর
বিদ্যালয়টি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে সরকারি অনুমোদন লাভ করে এবং জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় আসে।
অবকাঠামো ও পরিবেশ
বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি সবুজে ঘেরা, মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত এবং শিক্ষার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রবেশ করলেই দেখা যায় জাতীয় পতাকা ও বিদ্যালয়ের নিজস্ব পতাকা উত্তোলনের স্থান। চারপাশে গাছপালা আর ফুলের বাগান যেন বিদ্যালয়টিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এমন শান্তিপূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে।
একাডেমিক কার্যক্রম
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষকগণ। নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষামূলক কার্যক্রম, বিজ্ঞান চর্চা এবং গণিত অলিম্পিয়াডের মতো নানা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
শুধু পাঠ্যপুস্তক নির্ভর নয়, বরং পাঠ্যবহির্ভূত কার্যক্রমেও বিদ্যালয়টি গুরুত্ব দেয়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, কুইজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশে সহায়তা করা হয়।
ফলাফল ও সাফল্য
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আসছে। প্রতিবছরই একাধিক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা বাড়িয়ে তোলে। এলাকার গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে উপবৃত্তির ব্যবস্থা, যা তাদের শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ায়।
শিক্ষক ও পরিচালনা
বিদ্যালয়ে বর্তমানে রয়েছেন অভিজ্ঞ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকগণ। তাঁরা শুধু পাঠদানে নয়, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ শেখাতেও অত্যন্ত আন্তরিক।
বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সুশৃঙ্খল পরিচালনায় বড় ভূমিকা রাখছে।
সমাজে অবদান
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এই এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক উন্নয়নের এক প্রধান চালিকা শক্তি। বহু শিক্ষার্থী এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে এখন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর্মরত আছেন—কেউ চিকিৎসক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা শিক্ষক বা সরকারি কর্মকর্তা।
বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ শেখায়। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, স্যানিটেশন সচেতনতা এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে আরও আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ সংযোজন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্য পৃথক ল্যাব এবং কারিগরি শিক্ষার সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপসংহার
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি প্রজন্ম গড়ার কারখানা। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ বিদ্যালয় যুগ যুগ ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আর তাদের গড়ে তুলতেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
আমরা আশা করি, এই বিদ্যালয় আগামীতেও তার ঐতিহ্য ধরে রেখে আরও অনেক আলোকিত মানুষ গড়ে তুলবে।
